প্রশ্নঃ হজের দিনগুলোতে তথা যিলহজ মাসের ৯,১০,১১,১২, ও ১৩ তারিখে উমরা আদায় করার হুকুম কি?
الجواب باسم ملهم الصدق والصواب
উত্তরঃ
হজের দিনগুলো তথা যিলহজ মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে উমরা আদায় করা জায়েয নেই অর্থাৎ মাকরূহে তাহরীমী। এ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে উমরা আদায় করতে কোন সমস্যা নেই।
তবে কেউ যদি হজ্জে কিরান আদায়কারী হয়ে থাকে, তার জন্যে উক্ত ৫ দিনে উমরা করা জায়েয আছে।
হজ্জে কিরান বলা হয়, হজের মাসে হজ ও উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে একই সাথে হজ ও উমরা আদায় করা।
উল্লেখ্য, সামর্থবানদের জন্যে জীবনে একবার উমরা করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর রমজান মাসে উমরা করা মুস্তাহাব।
الأدلة الشرعية
(শরয়ী দলীলসমূহ)
قال الله تعالى: وأتموا الحج والعمرة لله (سورة البقرة: رقم الآية-196)
অনুবাদ: আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর তোমরা “আল্লাহ তায়ালার (সন্তুষ্টির) জন্য” হজ ও উমরা আদায় কর।
সূত্র: আল কুরআন, সূরা: বাকারা, আয়াত নং: ১৯৬
(وَجَازَتْ فِي كُلِّ السَّنَةِ) وَنُدِبَتْ فِي رَمَضَانَ (وَكُرِهَتْ) تَحْرِيمًا (يَوْمَ عَرَفَةَ وَأَرْبَعَةً بَعْدَهَا) (الدر المختار: الجلد-2 و الصفحة-173)
অনুবাদ: সারা বছরই উমরা আদায় করা জায়েয (এবং রমজান মাসে উমরা আদায় করা উত্তম) কিন্তু আরাফার দিন (৯ই যিলহজ) এবং তার পরবর্তী ৪দিনে (১০,১১,১২, ও ১৩ই যিলহজ) উমরা আদায় করা মাকরূহ (তাহরীমী)।
সূত্র: আদ্দুররুল মুখতার, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৭৩
وَلَنَا مَا رُوِيَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ : ( وَقْتُ الْعُمْرَةِ السَّنَةُ كُلُّهَا إلَّا يَوْمَ عَرَفَةَ وَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِ ) وَالظَّاهِرُ أَنَّهَا قَالَتْ سَمَاعًا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؛ لِأَنَّهُ بَابٌ لَا يُدْرَكُ بِالِاجْتِهَادِ ، وَلِأَنَّ هَذِهِ الْأَيَّامَ أَيَّامُ شُغْلِ الْحَاجِّ بِأَدَاءِ الْحَجِّ ، وَالْعُمْرَةُ فِيهَا تَشْغَلُهُمْ عَنْ ذَلِكَ وَرُبَّمَا يَقَعُ الْخَلَلُ فِيهِ فَيُكْرَهُ (بدائع الصنائع: جلد-5 كتاب الحج والباب-أركان العمرة و الصفحة-304)
অনুবাদ: “হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- আরাফার দিন (৯ই যিলহজ), কুরবানীর দিন (১০ই জিলহজ), এবং আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলো (১১,১২, ও ১৩ই যিলহজ) ব্যতিত সারা বছরই উমরা আদায় করার সময়।” এই হাদীসটিতে এটা তো সুস্পষ্ট যে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. উল্লেখিত বক্তব্যটি সরাসরি রাসূল সা. থেকে শুনেছেন। কারণ, এটা এমন একটি বিষয় যা ইজতিহাদের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না।
এছাড়াও হজের দিনগুলোতে হাজী সাহেবানরা হজের বিধি-বিধান আদায়ে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। আর এই সময়ে উমরা আদায় করা মূলত সেই হাজী সাহেবানদেরকে হজ পালনের কার্যাবলী আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। যা স্বভাবতই তাদের হজের মধ্যে অসুবিধা ও ত্রুটির জন্ম দেয়। ফলে হজের দিনগুলোতে “উমরা আদায় করা” শুধু মাকরূহই নয় বরং মাকরূহে তাহরীমী বা অত্যন্ত অপন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হবে।
সূত্র: বাদায়ে’ সানায়ে’ খন্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৩০৪, অধ্যয়: কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ: আরকানুল উমরা
ووقتها: جميع السنة إلا خمسة أيام تكره فيها العمرة لغير القارن كذا في فتاوى قاضيخان؛ وهي يوم عرفة ويوم النحر وأيام التشريق و الأظهر من المذهب ما ذكرنا ولكن مع هذا لو أداها في هذه الايام صح (الفتاوى الهندية المعروف بالفتاوى العالمكيرية جلد-1 و الصفحة-264)ح
অনুবাদ: উমরার সময় হলো “সারা বছর”। তবে পাঁচটি দিন (যিলহজ মাসের ৯,১০,১১,১২, ও ১৩ তারিখ) এমন রয়েছে যে দিনগুলোতে কিরান হজকারী ব্যতীত অন্যদের জন্য উমরা আদায় করা মাকরূহ। আর ফাতাওয়া কাজীখানে এমনটিই বর্ণিত হয়েছে। সেই দিনগুলো হলো- আরাফার দিন, কুরবানীর দিন, এবং আইয়ামে তাশরীক। আর আমরা যে মতামত উল্লেখ করলাম তা আমাদের মাযহাবের সবচেয়ে সুন্দর ও সঠিক মতামত। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ এই দিনগুলোতে উমরা আদায় করে তাহলে তা সহীহ হবে।
সূত্র: আল ফাতাওয়াল হিন্দিয়া (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী), খন্ড: ১ম, পৃষ্ঠা-২৬৪
والله أعلم بالصواب
উত্তর প্রদানেঃ
নাম: মাওলানা রফিকুল ইসলাম
রোল নং: ১৬
শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
জামিয়া মারকাযুদ দুরূস আল ইসলামিয়া, মানিক নগর, ঢাকা-১২০৩