সেহরীর সময় মানুষকে জাগাতে কুরআন পাঠ গজল গাওয়া ও বারবার ইলান করার হুকুম কী?
প্রশ্ন
বর্তমানে রমজান মাসে শেষ রাতে লোকদের জাগানোর জন্য সেহরীর শেষ সময়ের এক দেড় ঘন্টা, কোথাও দুই ঘন্টা আগে থেকেই মাইকে এলান করার রেওয়াজ রয়েছে। গজল, কুরআন তিলাওয়াত, বারবার ইলান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে সজাগ করার চেষ্টা করা হয়। যদ্ধারা অনেকেরই তাহাজ্জুদ, জিকির আজকার, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ ইত্যাদি ব্যক্তিগত ইবাদতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। মাইকের তীব্র আওয়াজের কারণে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন হল, এভাবে লোকদের জাগাতে সেহরীর সময় মাইকে ঘোষণা ও গজল পরিবেশন করার হুকুম কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
উল্লেখিত সুরতে লোকদের জাগাতে যেসকল পন্থা ব্যবহার করা হচ্ছে, এতে স্পষ্ট ভাবেই অন্যদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, আর অন্য কারো ইবাদতে ক্ষতি হলে মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির করা জায়েজ নেই। হাদীসে স্পষ্ট ইরশাদ হয়েছেঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ، فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُونَ بِالْقِرَاءَةِ، فَكَشَفَ السِّتْرَ، وَقَالَ: «أَلَا إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ، فَلَا يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلَا يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ»
হযরত আবু সাঈদ রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে “ইতিকাফ” করাকালীন সাহাবীদের উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করতে শুনে পর্দা উঠিয়ে বলেন, জেনে রাখ! তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের রবের সাথে গোপন আলাপে রত আছো। অতএব তোমরা [উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠের দ্বারা] একে অন্যকে কষ্ট দিও না, এবং তোমরা একে অন্যের চেয়ে উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করো না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৩৩২]
এ হাদীস পরিস্কার প্রমাণ করে অন্যের কষ্ট হলে মসজিদেই জোরে কিরাআত পড়া ঠিক নয়। সেখানে মসজিদের বাইরের লোকদের ইবাদতে বিগ্ন ঘটিয়ে অহেতুক গজল গাওয়া কিভাবে বৈধ হতে পারে?
এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল রয়েছে। রয়েছে সময় দেখার জন্য পর্যাপ্ত ঘড়ি। এলার্ম দেবার পদ্ধতি। সুতরাং মসজিদের মাইকে এলানের মাধ্যমে সেহরীর সময় বলে দেয়া অহেতুক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়।
মাঝে মাঝে সময় বলারও কিছুটা অবকাশ আছে বলা যায়, কিন্তু শেষ রাতে, হামদ-নাত, গজল ইত্যাদি পাঠ করে বারবার ইলান করে মানুষকে ইবাদতে ডিষ্টার্ব করা কিছুতেই বৈধ হবে না।
এর মাধ্যমে কয়েকটি দোষণীয় কাজ করা হয়। যেমন-
১
অহেতুক এ কর্মের দ্বারা একাগ্রতার সাথে আমল করার মাঝে বিপত্তি সৃষ্টি হয়।
২
তাহাজ্জুদসহ নফল ইবাদতে খুশুখুজু নষ্ট হয়।
৩
একাগ্রচিত্তে দুআ করার মাঝে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
৪
অসুস্থ্য ও নাবালেগ সন্তানদের ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
উপরোক্ত কর্মের দ্বারা মুমিনদের কষ্ট দেয়া হয়। আর মুসলমানদের কষ্ট দেয়া হারাম। একাধিক আয়াতে ও হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। সুতরাং এহেন অহেতুক হারাম কাজ করা থেকে প্রতিটি মসজিদ কর্তৃপক্ষেরই বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য।
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا [٣٣:٥٨
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। [সূরা আহযাব-৫৮]