
জেনারেল ও মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা : সমস্ত ক্লাসের নাম, পরীক্ষা ও পাঠ্যক্রম
লিখেছেন – নাঈম মুছা
এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে কোন্ শিক্ষাব্যবস্থা কতগুলো ক্লাস নিয়ে গঠিত এবং ক্লাসগুলোকে কি বলে অভিহিত করা হয়। প্রথমে স্কুল তারপরে আলিয়া মাদরাসা এবং সর্বশেষ কওমি মাদরাসা এভাবে পর্যায়ক্রম রক্ষা করব। তাহলে বোঝার ক্ষেত্রে সহজ হবে। কেননা স্কুল-কলেজ এবং আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাসসমূহ প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ, বলা চলে একেবারেই সদৃশ। সে তুলনায় কওমি মাদরাসার ক্লাসসমূহের নাম ও ক্রম কিছুটা ভিন্ন।
সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা:
সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় মূলত চারটি প্রধান স্তর আছে। ক্রমানুসারে সাজালে এমন দাঁড়ায়:
১. প্রাথমিক স্তর:
১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। ৫ম শ্রেণিতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরিক্ষা (PSC-Primary School Certificate Examination) দিতে হয় সরকারি বোর্ডের অধীনে। এই পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে তারা মাধ্যমিক স্তরে প্রবেশ করে।
২. মাধ্যমিক স্তর:
নিম্ম মাধ্যমিক স্তর:
৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। ৮ম শ্রেণিতে গিয়ে এর মধ্যে আরেকটি বোর্ড পরিক্ষায় উপনীত হতে হয় সকল শিক্ষার্থীকে। এ পরিক্ষাকে বলা হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরিক্ষা (JSC-Junior School Certificate Examination)। এ পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা নিম্ন মাধ্যমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তরে উপনীত হয়।
মাধ্যমিক স্তর:
৯ম এবং ১০ম শ্রেণিকে একত্রে মাধ্যমিক স্তর বলা হয়। ১০ম শ্রেণিতে গিয়ে সর্বশেষ মাধ্যমিক (SSC-Senior School Certificate Examination) পরিক্ষায় অংশগ্রহণ এবং পাস করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল জীবন শেষ করে।
৩.উচ্চমাধ্যমিক স্তর:
একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। এ স্তরে দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করে শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা (HSC-Higher Secondary School Certificate) – তে অংশগ্রহণ করে এবং পাস করার মাধ্যমে তাদের কলেজ জীবনের ইতি টানে।
৪. উচ্চশিক্ষা:
কলেজ জীবন শেষ করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের মাধ্যমে তাদের উচ্চশিক্ষার জগতে প্রথম পদার্পণ করে।
উচ্চশিক্ষার ২টি স্তর রয়েছে-
১. অনার্স বা স্নাতক:
৪ বছর মেয়াদী কোর্স এবং ডিগ্রির ক্ষেত্রে ৩ বছর মেয়াদি কোর্স।
২. মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর:
১ বছর মেয়াদী কোর্স এবং ডিগ্রির ক্ষেত্রে ২ বছর মেয়াদী কোর্স।
মাস্টার্স শেষ করার মাধ্যমে সকলে সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি টানে। এবং এই সর্বমোট আনুষ্ঠানিক শিক্ষাবছরের সময়কাল হচ্ছে ১৭ বছর। অনার্স শেষ করে মাস্টার্স পড়াকালীন অনেকে এমফিল গবেষণা করে থাকে। এরপর মাস্টার্স শেষ হলে যারা পিএইচডি বা উচ্চতর গবেষণার সুযোগ পায় তারা আরও ৫ বছর মেয়াদি বা আরও বেশি সময় ধরে তাদের গবেষণা কার্য চালিয়ে যায়। তবে এটা ঐচ্ছিক ব্যাপার এবং সকলে সুযোগ পায় না। অসাধারণ রেজাল্ট না থাকলে পিএইচডি করার সুযোগ মেলা ভার। মোটামুটি এই হলো জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র।
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা:
মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে প্রধানত দুটি ধারা চলমান। এবং বাংলাদেশে এই দুই ধারার মাদরাসা ব্যতীত অন্যকোনো মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নেই। থাকলেও সেগুলো মূলধারার মাদরাসা নয়।
আলিয়া মাদরাসা:
আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় ৫টি স্তর চালু আছে। তবে স্তরগুলোর নাম সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আলাদা। ক্রমানুসারে সাজালে এমন দাঁড়ায়:
১. ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক স্তর:
১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। ৫ম শ্রেণিতে গিয়ে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরিক্ষা (Ebtedayee Education Completion Examination) দিতে হয় সরকারি মাদরাসা বোর্ডের অধীনে। এই পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়।
২. দাখিল বা মাধ্যমিক সমমান স্তর:
নিম্ন মাধ্যমিক স্তর:
৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। ৮ম শ্রেণিতে গিয়ে এর মধ্যে আরেকটি বোর্ড পরিক্ষায় উপনীত হতে হয় সকল শিক্ষার্থীকে। এ পরিক্ষাকে বলা হয় জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরিক্ষা (JDC-Junior Dakhil Certificate Examination)। এ পরিক্ষায় পাস করার পর তারা নিম্মমাধ্যমিক স্তর থেকে উত্তীর্ণ হয়ে মাধ্যমিক স্তরে উপনীত হয়।
মাধ্যমিক স্তর:
৯ম এবং ১০ম শ্রেণিকে একত্রে দাখিল বা মাধ্যমিক স্তর বলা হয়। ৯ম শ্রেণি শেষ করে ১০ম শ্রেণিতে গিয়ে সর্বশেষ দাখিল বা সমমান (Dakhil Examination) পরিক্ষায় অংশগ্রহণ এবং পাস করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ধাপ আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক সমমান স্তরে প্রবেশ করে।
৩. আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক সমমান স্তর:
আলিম ১ম বর্ষ এবং আলিম ২য় বর্ষ নিয়ে গঠিত আলিম স্তর। এটাকে সহজ বাংলায় একাদশ শ্রেণি এবং দ্বাদশ শ্রেণি বলা হয়। এ স্তরে আলিম ২য় বর্ষ শেষ করে শিক্ষার্থীরা আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক সমমান (Alim Examination) পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং পাস করার মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের বিস্তৃত জগতে প্রবেশ করে।
এখানে কিছু কথা না বললেই নয়। জেনারেল এবং কওমি মাদরাসার ছাত্রদের থেকে আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পার্থক্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়। কেননা আলিম যেহেতু উচ্চমাধ্যমিক সমমানের সেহেতু আলিয়া মাদরাসার একজন ছাত্র ইচ্ছা করলে আলিম শেষ করে অন্য সকল জেনারেল শিক্ষার্থীদের মত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে। এবং ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়ে সে বিশ্ববিদ্যালয় জগতে প্রবেশ করে। পাশাপাশি অনেকে একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি আলিয়া মাদরাসার পরবর্তী ধাপ ফাজিল বা স্নাতক এবং ডিগ্রি সমমান স্তরে ভর্তি হয়। অর্থাৎ, একই সাথে সে সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যেকোন বিষয়ে অনার্স করতে পারে এবং পাশাপাশি মাদরাসা থেকে ফাজিল তথা স্নাতক এবং ডিগ্রি সমমানের কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারে। আবার যেসব ছাত্র কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না তাদের অনেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি হয় অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে চলে যায়। কিন্তু পাশাপাশি তারা ফাজিল তথা স্নাতক সমমান এবং তার পরবর্তী ধাপ কামিল তথা স্নাতকোত্তর সমমান পর্যায়ে ভর্তি হয়ে থাকে এবং পরিক্ষার সময়ে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অনেকে আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়মুখী না হয়ে শুধু ফাজিল ও কামিল পড়ে।
৪. ফাজিল বা স্নাতক এবং ডিগ্রী সমমান স্তর:
ফাজিলের মধ্যে আবার ২টি স্তর আছে। একটি ফাজিল অনার্স এবং আরেকটি ফাজিল ডিগ্রি। ফাজিল অনার্সের মেয়াদ ৪ বছর। যেটা স্নাতক পর্যায়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অার ফাজিল ডিগ্রি এর মেয়াদ ৩ বছর। যেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রির সমমর্যাদার। এখন চাইলে যে কেউ ফাজিল অনার্স পড়তে পারে অথবা ফাজিল ডিগ্রি পড়তে পারে। সেটি নির্ভর করছে কে কোনটি পড়তে ইচ্ছুক তার উপর। ফাজিলের পরে আসে কামিল।
৫. কামিল বা স্নাতকোত্তর এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমমান:
কামিল যেটি মাস্টার্সের সমমান সেটি ১ বছর মেয়াদী কোর্স। এবং যেটি ডিগ্রির সমমান সেটি ২ বছর মেয়াদি কোর্স। কামিল শেষ করার মাধ্যমে সকলে তার আলিয়া শিক্ষা জীবনের সমাপ্তিতে পৌঁছে যায়। সর্বমোট আলিয়া শিক্ষাবছরের সময়কালও হচ্ছে জেনারেল শিক্ষাব্যবস্থার মত ১৭ বছর।
২০০৬ সালে তৎকালীন সরকার ফাজিল ও কামিলকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মান দেয়। এবং ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত সমগ্র দেশের ফাজিল ও কামিল পরিক্ষা নিয়ন্ত্রিত হতো ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-এর অধীনে। এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া কর্তৃক সার্টিফিকেট প্রদান করা হতো। কিন্তু সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সকল স্নাতক (ফাজিল) ও স্নাতকোত্তর (কামিল) মাদ্রাসাগুলোর অধিভুক্তি, পাঠ পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ, পরিদর্শন ও কোর্স অনুমোদনসহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সার্টিফিকেটও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান করা হবে। এটা হলো আলিয়া মাদরাসার চিত্র।
কওমি মাদরাসা
কওমি মাদরাসার স্তরগুলোকে সাধারণত মোট ৬টি ভাগে ভাগ করা যায়। যদি পর্যায়ক্রমিকভাবে সাজাই তাহলে এমন হবে:
১. তাহফিজুল কুরআন স্তর:
অধিকাংশ কওমি মাদরাসার সাথে একটি করে হেফজ বিভাগ সংযুক্ত থাকে। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র হেফজ মাদরাসা দেখা যায় যেগুলো কোনো কওমি মাদরাসার সাথে যুক্ত না। তবে সাধারণত হেফজ বিভাগকে কওমি মাদরাসায় প্রবেশের প্রথম দ্বার হিসেবে গণ্য করা হয়। এ স্তরে ছাত্ররা পবিত্র কুরআন মুখস্ত করে। এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্লাসে পুরো কুরআনের বঙ্গানুবাদ আত্মস্থ করে থাকে। এ স্তরকে যদিও কওমি মাদরাসার কোনো ক্লাস হিসেবে ধরা হয় না। অতিরিক্ত সময়কাল হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
২. ইবতেদায়ী বা প্রাথমিক স্তর:
১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পর্যায়কে ইবতেদায়ী বলা হয়। যেটা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা ও আলিয়া মাদরাসার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে সাধারণত কওমি মাদরাসার ক্ষেত্রে ক্লাস শব্দ ব্যবহার না করে জামাত শব্দ ব্যবহার করা হয়। আমরা যেমনটা জিজ্ঞাসা করি তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? কিন্তু এখানে তেমনটা জিজ্ঞাসা না করে জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কোন জামাতে পড়ো? পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার অধীনে একটি বোর্ড পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এই বোর্ড পরিক্ষা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত না। এবং প্রাথমিক স্তরের সমমান দেয়া হয় না। কওমি মাদরাসায় দাওরা হাদিসকে শুধুমাত্র মাস্টার্সের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে কওমি মাদরাসার একাধিক শিক্ষাবোর্ড আছে। যেগুলো একেকটা একেক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। তবে সবথেকে প্রধান যে বোর্ড সেটি হলো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া। সমগ্র আলোচনায় ঝামেলা এড়ানোর জন্য আমরা বেফাকের আলোকে ক্লাস বা জামাত যেভাবে ভাগ করা হয়েছে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
৩. মুতাওয়াসসিতাহ বা নিম্ন মাধ্যমিক স্তর:
এটি হলো ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। একত্রে এ জামাতগুলোকে মুতাওয়াসসিতাহ বলা হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে ছাত্ররা আবার আরেকটি বোর্ড পরিক্ষার সম্মুখীন হয়। বোর্ড পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়।
৪. আল মারহালাতুস সানাবিয়্যাহ আল আম্মাহ বা মাধ্যমিক স্তর:
এ জামাত ২টি বর্ষ নিয়ে গঠিত। ১ম বর্ষকে নবম শ্রেণি হিসেবে ধরা হয় এবং ২য় বর্ষকে ১০ম শ্রেণি হিসেবে গণ্য করা হয়। ১০ম শ্রেণি শেষ করে ছাত্ররা আবারও আরেকটি বোর্ড পরিক্ষার সম্মুখীন হয়। এবং এ পরিক্ষায় পাশ করার পর তারা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রবেশ করে।
৫. আল মারহালাতুস সানাবিয়্যাহ আল উলইয়া বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তর:
এ জামাতও ২ বর্ষ নিয়ে গঠিত। ১ম বর্ষকে একাদশ শ্রেণি এবং ২য় বর্ষকে দ্বাদশ শ্রেণি হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ২য় বর্ষ শেষে ছাত্ররা বোর্ড পরিক্ষায় অংশ নেয়। পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া পূর্বক ছাত্ররা ফযীলত স্তরে উপনীত হয়। বলে রাখা ভালো যেহেতু কওমি মাদরাসার তাকমীল বা মাস্টার্স ব্যতীত অন্য কোনো ক্লাসের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি সেহেতু ছাত্ররা কওমি মাদরাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে কোনো প্রকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না। এমনকি আলিয়া মাদরাসার ফাজিল স্তরেও ভর্তি হওয়ার অবকাশ থাকে না।
৬. মারহালাতুল ফযীলত বা স্নাতক ডিগ্রি সমমান:
এ জামাতের মেয়াদ ২ বছর। অর্থাৎ, ২ বছর পড়েই অনার্সের সমান মান পাওয়া যাবে। আলিয়া মাদরাসার ফাজিল এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক কোর্সের মেয়াদের সাথে কওমি মাদরাসার ফযীলত বা স্নাতক ডিগ্রির কোর্সের মেয়াদের তারতম্য এখানেই। যেখানে অন্য ছাত্ররা ৪ বছর পড়ার পরে স্নাতক সম্মানধারী হবে সেখানে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা ২ বছর পড়েই তার সমমর্যাদার স্বীকৃতি পাবে। তবে এ জামাতে বোর্ড পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
৭. মারহালাতুত তাকমীল বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমমান:
এ জামাতের মেয়াদও ২ বছর। ১ম বর্ষ এবং ২য় বর্ষ নিয়ে গঠিত। এক্ষেত্রে সাধারণ মাস্টার্সের সময়কালের সাথে কওমি মাদরাসার মাস্টার্সের সময়কাল সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা সাধারণ মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদও ২ বছর। এবং এ জামাতের শেষে বেফাকের অধীনে বোর্ড পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সরকারি সনদ এবং স্বীকৃতি মিললেও এখনো পর্যন্ত কওমি মাদরাসাগুলো কোনো প্রকার সরকারি শিক্ষাবোর্ড অথবা সরকারি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় নি। সুতরাং, এ সনদের মান নিয়ে এখনও প্রশ্ন থেকে যায়। অনেকে এ স্বীকৃতির মান নিয়ে এখনও প্রশ্ন তুলছে।
এই হলো কওমি মাদরাসার সকল জামাতের ক্রম ও বৃত্তান্ত। সর্বমোট শিক্ষাবছরের সময়সীমা হচ্ছে ১৬ বছর। উল্লেখ্য কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের হিসেব অনুযায়ী হেফজ পড়াকালীন সময়কালকে কোনো জামাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যার যে কয় বছর সময় লাগে হেফজ পড়তে তার সে সময়কাল উক্ত ১৬ বছরের সাথে যুক্ত হবে। এছাড়া বোর্ডের তারতম্যের কারণে কওমি মাদরাসার জামাতের শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে। তাছাড়া কওমি মাদরাসার মধ্যে আবার লং কোর্স এবং শর্ট কোর্স বলে ২টি পদ্ধতি চালু আছে। উপরে যে পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো সেটা লং কোর্স। শর্ট কোর্সের মেয়াদ সাধারণত ৭ বছর। এবং শর্ট কোর্সকে মাদানি নিসাব বলা হয়ে থাকে। শর্ট কোর্সে অনেক অপ্রয়োজনীয় জামাত বাদ দিয়ে সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। উপরে বর্ণিত অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনামূলক পার্থক্য বর্ণনার খাতিরে শর্ট কোর্স নিয়ে আলোচনা পরিত্যাগ করা হলো।
- সামহয়ার ইন ব্লগ অবলম্বনে