রোযা ও সাদাকাতুল ফিতর সংক্রান্ত জরুরি সকল মাসায়েল
রোযা ও সাদাকাতুল ফিতর : জরুরি মাসায়েল
চাঁদ দেখা সংক্রান্ত মাসআলা
মাসআলা : রমযান শুরু হওয়া যেহেতু চাঁদ দেখা ও প্রমাণিত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল, তাই মুসলমানদের জন্য রমযানের চাঁদ অন্বেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। হাদীস ও ফিকহের কিতাবে রমযানের চাঁদ অন্বেষণের ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব এসেছে। রমযানের চাঁদ অন্বেষণের জন্য শাবান মাসের তারিখ গণনা ও হিসাব রাখার তাকীদ এসেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম চাঁদ অন্বেষণের ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। হাদীস শরীফে এসেছে–
أَحْصُوا هِلاَلَ شَعْبَانَ لِرَمَضَانَ.
রমযানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখ। –সুনানে দারাকুতনী, হাদীস ২১৭৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮৭
মাসআলা : শাবানের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলেই রমযানের রোযা শুরু হবে। নতুবা শাবানের ৩০ দিন পূর্ণ করার পর রোযা শুরু হবে। অর্থাৎ আকাশ পরিষ্কার না থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করে রমযানের রোযা রাখা শুরু হবে। এক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞান বা অন্য কোনো উপায়ে চাঁদ দেখার সমূহ সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবে চাঁদ দেখা না গেলে ঐ দিন রোযা শুরু হবে না। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে–
لا تَصُومُوا حَتى تَرَوُا الْهِلَالَ، وَلَا تُفْطِرُوا حَتى تَرَوْهُ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدِرُوا لَه.
তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখার আগে রোযা শুরু করো না এবং (ঈদের) চাঁদ দেখার আগে রোযা ছেড়ো না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় (এবং চাঁদ দেখা না যায়), তাহলে মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৬
মাসআলা : শাবান মাসের ২৯ ও ৩০তম দিন রোযা রাখবে না, রমযানের নিয়তেও না, নফলের নিয়তেও না। অবশ্য যে ব্যক্তি আগ থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিনে নফল রোযা রেখে আসছে এবং ঘটনাক্রমে ২৯ ও ৩০ তারিখে ওই দিন পড়েছে, তার জন্য এই তারিখেও নফল রোযা রাখা জায়েয।
হাদীস শরীফে আছে–
لَا يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ رَجُلٌ كَانَ يَصُوْمُ صَوْمَه، فَلْيَصُمْ ذلِكَ الْيَوْمَ.
তোমাদের কেউ যেন রমযান মাসের এক দিন বা দুই দিন আগে থেকে রোযা না রাখে। তবে কারো যদি আগে থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে এবং ঘটনাক্রমে সে দিনটি ২৯ ও ৩০ শাবান হয়, তাহলে সে ওই দিন রোযা রাখতে পারে। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯১৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮৪; ইলাউস সুনান ৯/১২৪
যাদের ওপর রোযা রাখা ফরয
রমযানের চাঁদ উদিত হওয়ার পর প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর পূর্ণ মাস রোযা রাখা ফরয।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ .
অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। –সূরা বাকারা (০২) : ১৮৫
মুসাফিরের রোযা
মাসআলা : মুসাফির ব্যক্তির জন্য সফর অবস্থায় রোযা রাখা জরুরি নয়। সফর অবস্থায় রোযা না রেখে পরে রাখারও সুযোগ রয়েছে। তবে বেশি কষ্ট না হলে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায়ও রোযা রাখা উত্তম।
আসেম রাহ. বলেন, আনাস রা.-কে সফরের হালতে রোযা রাখার বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, মুসাফিরের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে রোযা রাখা উত্তম। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯০৬৭
মাসআলা : সফর অবস্থায় যদিও রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে তথাপি কেউ রোযা রাখলে বিনা ওযরে তা ভাঙা জায়েয নয়। সফর অবস্থায় কেউ রোযা রেখে ভেঙে ফেললে গোনাহগার হবে। তবে এ কারণে কাফফারা আসবে না। শুধু কাযা করতে হবে। –রদ্দুল মুহতার ২/৪৩১
মাসআলা : সফরের কারণে রোযা না রাখার সুযোগ তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন কেউ দিনের শুরু তথা সুবহে সাদিকের সময় মুসাফির থাকবে। অতএব সুবহে সাদিকের সময় নিজ এলাকায় বা অন্য কোথাও মুকীম থাকলে সেক্ষেত্রে দিনের বেলা সফর করার পূর্ণ ইচ্ছা থাকলেও সফরের অযুহাতে রোযা না রাখার সুযোগ নেই। এমনিভাবে মুকীম অবস্থায় রোযা রেখে সুবহে সাদিকের পর সফর করলে শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া রোযা ভেঙে ফেলা জায়েয নেই।
মাসআলা : মুসাফির ব্যক্তি যদি সফরের কারণে রোযা না রাখে; কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই সে মুকীম হয়ে যায়, তাহলে সে দিনের অবশিষ্ট সময় রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে আহার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। আর পরবর্তী সময়ে এ রোযার কাযা করে নেবে।
হাসান বসরী রাহ. বলেন, যে মুসাফির রমযানের দিনে (সফরের হালতে) খাবার খেয়েছে, সে মুকীম হয়ে গেলে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকবে। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৪৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২৮
হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত মহিলার রোযা
মাসআলা : রমযানের দিনে হায়েয ও নেফাসগ্রস্ত মহিলা রোযা থেকে বিরত থাকবে এবং পরবর্তীতে ঐ দিনগুলোর রোযা কাযা করে নেবে।
মাসআলা : রমযানের দিনে হায়েয-নেফাস থেকে পবিত্র হলে অবশিষ্ট দিন রমযানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক এবং পরবর্তী সময়ে এ দিনের রোযারও কাযা করতে হবে। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২২১, হাদীস ৯৪৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২৮
অসুস্থ ব্যক্তির রোযা
মাসআলা : অসুস্থ ব্যক্তি যদি রোযা রাখলে রোগ বৃদ্ধি বা আরোগ্য-লাভে বিলম্ব হওয়ার প্রবল আশঙ্কা হয়, তাহলে এ অবস্থায় তার রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে। সুস্থ হওয়ার পরে সে রোযাগুলোর কাযা করে নেবে। তবে হালকা বা সাধারণ অসুস্থতার অযুহাতে রোযা না রাখা বা রেখে ভেঙে ফেলার সুযোগ নেই। সেজন্য এসব ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ মোতাবেক আমল করাই নিরাপদ। –আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলার রোযা
মাসআলা : গর্ভবতী মহিলা রোযা রাখলে যদি তার বা সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, অনুরূপভাবে স্তন্যদানকারী মা রোযা রাখলে দুগ্ধজাত সন্তানের কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে এ অবস্থায় তাদের রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে পরে ওই রোযা কাযা করে নেবে। –আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে–
إِن اللهَ وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلَاةِ وَعَنِ الْحَامِلِ وَالْمُرْضِعِ الصَّوْمَ.
আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৭১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪২২
দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তির রোযা
মাসআলা : বার্ধক্য বা জটিল কোনো রোগের কারণে যার রোযা রাখার সামর্থ্য নেই এবং পরবর্তীতে কাযা করার সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই, এমন ব্যক্তির রোযা রাখার প্রয়োজন নেই। রোযার পরিবর্তে সে ফিদইয়া প্রদান করবে।
নাবালেগ বাচ্চাদের রোযা
মাসআলা : নাবালেগ বাচ্চাদের ওপর যদিও রোযা রাখা জরুরি নয়; তথাপি বাচ্চারা যখন শারীরিকভাবে রোযা রাখতে সক্ষম হয়, তখন থেকে তাদেরকে দুয়েকটি করে রোযা রাখতে উৎসাহিত করবে। আর বালেগ হওয়ার পরই যেহেতু রোযা রাখা আবশ্যক হয়ে যায়, তাই সে বিষয়টি লক্ষ রেখে বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে ছেলে-মেয়েদেরকে রোযার প্রতি অভ্যস্ত করে তুলবে।
সাহাবায়ে কেরাম রা. তাঁদের সন্তানদেরকে রোযা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। রুবায়্যি‘ বিনতে মুআওয়ায রা. বলেন, আমরা নিজেরা আশুরার রোযা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোযা রাখাতাম। তাদের জন্য পশমের তৈরি খেলনা রাখতাম। যখন বাচ্চাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদত তখন তাকে খেলনা দিতাম, এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৬০
রোযার নিয়ত
মাসআলা : রোযার নিয়ত করা ফরয। নামায-রোযা ও অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে অন্তরের সংকল্পই হল নিয়ত। মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়। তবে অন্তরের নিয়তের সাথে সাথে মুখে উচ্চারণ করে বললেও অসুবিধা নেই। –উমদাতুল কারী ১/৩৩; শরহুল মুনইয়া ২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪১৫
মাসআলা : রোযার উদ্দেশ্যে সাহরি খেলে সেটিও রোযার নিয়তের জন্য যথেষ্ট। এর দ্বারাই রোযা সহীহ হয়ে যাবে। –আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৫
মাসআলা : রোযার নিয়তের নির্দিষ্ট কোনো শব্দ-বাক্য নেই। প্রচলিত আরবী নিয়ত হাদীস-আছার বা শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ ধরনের আরবী নিয়ত জরুরিও নয় বা এভাবে নিয়ত করা উত্তমও নয়; বরং এসব আরবী নিয়তের পেছনে না পড়াই ভালো। এটা অনেকের জন্যই অহেতুক পেরেশানীর কারণ হয়।
মাসআলা : রমযানের রোযার নিয়ত রাতে করাই উত্তম। তবে কেউ রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার আগে নিয়ত করলেও রোযা হয়ে যাবে। এর চেয়ে বিলম্বে নিয়ত করলে সে রোযা সহীহ হবে না।
আবদুল কারীম জাযারী রাহ. বলেন, কিছু লোক সকালে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিল, তখন উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. বললেন, যে ব্যক্তি (ইতিমধ্যে কিছু) খেয়েছে, সে বাকি দিন খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে খায়নি, সে বাকি দিন রোযা রাখবে। –আলমুহাল্লা ৪/২৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ৩/১৩৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৭৭
সাহরি ও ইফতার
মাসআলা : সাহরি খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়; এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরির সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরিতে বরকত রয়েছে। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫
অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, সাহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। তোমরা সাহরি খাও, যদিও এক ঢোক পানি হয়। কারণ যারা সাহরি খায়, আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন। –সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৪৭৬
মাসআলা : সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময় সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত বেশি দেরি করা উচিত নয় যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
আবদুল্লাহ ইবেন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সকল নবীকে (সময় হয়ে গেলে দেরি না করে) তাড়াতাড়ি ইফতার করতে আদেশ করা হয়েছে এবং সাহরি সময়ের শেষদিকে খেতে বলা হয়েছে। –আলমুজামুল আওসাত, তবারানী ২/৫২৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/৩৬৮
আমর ইবনে মাইমুন আলআওদি রাহ. বলেন, সাহাবায়ে কেরাম (সময় হয়ে যাওয়ার পর) তাড়াতাড়ি ইফতার করে নিতেন আর সাহরি সময়ের শেষদিকে খেতেন। –মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯০২৫
মাসআলা : সূর্যাস্তের পর দেরি না করে ইফতার করা মুস্তাহাব।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৫৭
মাসআলা : খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করবে।
আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। কেননা পানি হল পবিত্র। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৯৪
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব নামায পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দ্বারা, তা-ও না পেলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৯২
মাসআলা : ইফতারের সময় দুআ কবুল হয়। তাই এ সময় বেশি বেশি দুআ-ইস্তিগফার করা উচিত।
হাদীসে এসেছে, ইফতারের সময় রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (দ্র. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৫৩)
রোযা ভঙ্গের কারণসমূহ
যেসব কারণে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি
মাসআলা : রমযানে রোযা রেখে শরীয়তসম্মত কোনো ওযর ছাড়া ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে কাযা-কাফফারা দুটোই জরুরি।
হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রমযানে রোযা রেখে (ইচ্ছাকৃতভাবে) পানাহার করল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ করলেন, সে যেন একটি দাস আযাদ করে বা দুই মাস রোযা রাখে বা ষাটজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ায়। –সুনানে দারাকুতনী ২/১৯১; মাবসূত, সারাখসী ৩/৷৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৯-৪১০
মাসআলা : রমযানে রোযা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়।
একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি রোযা রেখে স্ত্রী সহবাস করেছি।
নবীজী তাকে কাফফারা আদায়ের আদেশ দেন। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৭০৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২৪
মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে (যে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল) কাফফারা আদায়ের সঙ্গে কাযা আদায়েরও আদেশ করেছেন। –মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৪৬১
মাসআলা : সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জেনেও আযান শোনা যায়নি অথবা ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি– এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে কাযা ও কাফফারা দুটোই জরুরি হবে।
মাসআলা : রমযানের রোযা রেখে বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করলে কাফফারা ওয়াজিব হয়। আর যদি রমযানের কোনো রোযা একেবারেই নাই রাখে তাহলে এ কারণে কাফফারা ওয়াজিব হবে না; তাকে শুধু ঐ রোযাটি কাযা করতে হবে। যদিও শরয়ী ওযর ছাড়া রমযানের রোযা না রাখা ভয়াবহ কবীরা গুনাহ। –রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০; হাশিয়াতুত তাহতাবী পৃ. ২৪৩
যেসব কারণে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়
মাসআলা : রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অসাবধানতাবশত কোনো খাদ্য বা পানীয় গলার ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে। –আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২
মাসআলা : ওযু বা গোসলের সময় রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাযা করতে হবে।
সুফিয়ান সাওরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রোযা অবস্থায় (ওযু করার সময়) কুলি করতে গিয়ে (অনিচ্ছাকৃতভাবে) গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙে যাবে এবং তার কাযা করতে হবে। চাই ওযু ফরয নামাযের জন্য হোক বা নফল নামাযের জন্য। –মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৩৮০; কিতাবুল আছল ২/১৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৮, ৩৮৮
মাসআলা : যা সাধারণত আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোযা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও ইকরিমা রাহ. বলেন, (পেটে) কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভেঙে যায়। কোনো কিছু বের হওয়ার দ্বারা রোযা ভাঙে না। –সহীহ বুখারী ১/২৬০ (তা‘লীক); বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪১০
মাসআলা : হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙে যাবে। এটা যে ভয়াবহ গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য।
হাদীস শরীফে কামেচ্ছা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকাকে রোযার অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার জান! রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার নিকট মেশকের চেয়েও বেশি প্রিয় (আল্লাহ তাআলা বলেন,) রোযাদার আমার জন্য পানাহার করা থেকে এবং কামেচ্ছা চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকে। –সহীহ বুখারী ১/২৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭২; ফাতাওয়া শামী ২/৩৯৯
মাসআলা : রোযা অবস্থায় হায়েয বা নেফাস শুরু হলে রোযা ভেঙে যাবে। পরে তা কাযা করে নেবে।
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহায় নারীদের লক্ষ করে বললেন–
…أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ، قُلْنَ: بَلى، قَالَ: فَذلِكِ مِنْ نُقْصَانِ دِينِهَا.
…নারীরা কি ঋতুস্রাবের সময় রোযা ও নামায থেকে বিরত থাকে না।
নারীরা বলল, অবশ্যই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই তাদের দ্বীনের অসম্পূর্ণতা। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৪০; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ১০০
মাসআলা : দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায়, তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙে যাবে। –আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬
মাসআলা : দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ছোলা পরিমাণ বা তার অধিক পরিমাণ খাবার গিলে ফেললে রোযা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাযা করতে হবে। –মাবসূত, সারাখসী ৩/৯৩-৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২
মাসআলা : ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০; কিতাবুল আছল ২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩২৬
মাসআলা : মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। –আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৫
মাসআলা : আগরবাতি ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃত গলার ভেতরে টেনে নিলে রোযা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে। –রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫
মাসআলা : সুবহে সাদিকের পর সাহরির সময় বাকি আছে ভেবে পানাহার অথবা স্ত্রীসঙ্গম করলে রোযা ভেঙে যাবে। তেমনি ইফতারের সময় হয়ে গেছে ভেবে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
আউন রাহ. থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. রাত বাকি আছে ভেবে সাহরি খেলেন। তারপর জানতে পারলেন, তিনি সুবহে সাদিকের পর সাহরি করেছেন। তখন তিনি বললেন, আমি আজ রোযাদার নই। (অর্থাৎ আমাকে এ রোযার কাযা করতে হবে।) –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯
আলী ইবনে হানযালা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রোযার মাসে উমর রা.-এর নিকট ছিলেন। তার নিকট পানীয় পেশ করা হল। উপস্থিত লোকদের কেউ কেউ সূর্য ডুবে গেছে ভেবে তা পান করে ফেলল। এরপর মুআযযিন আওয়াজ দিল, আমীরুল মুমিনীন! সূর্য এখনো ডোবেনি।
তখন উমর রা. বললেন, যারা ইফতার করে ফেলেছে, তারা একটি রোযা কাযা করবে। আর যারা ইফতার করেনি, তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৫০
মাসআলা : রোযা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করার পর রোযা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা করা জরুরি হবে। –ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১-৪০২; হাশিয়াতুত তাহতাবী, পৃ. ৩৬৮
যেসব কারণে রোযা ভাঙে না; কিন্তু অনেকে রোযা ভেঙে গেছে বলে মনে করে
মাসআলা : কোনো রোযাদার রোযার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে এতে রোযা নষ্ট হবে না। তবে রোযার কথা স্মরণ হওয়া মাত্র তা পরিহার করতে হবে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِم صَوْمَهُ، فَإِنمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ.
যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। –সহীহ মুসলিম হাদীস ১১৫৫; কিতাবুল আছল ২/১৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২
মাসআলা : স্বপ্নদোষের কারণে রোযা ভাঙে না।
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ ভরে বমি হল। তিনি তখন বললেন, তিনটি বস্তু রোযা ভঙ্গের কারণ নয়– বমি, শিঙা লাগানো ও স্বপ্নদোষ। –সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৪/২৬৪; কিতাবুল আছল ২/১৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬
মাসআলা : অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি হলেও রোযা ভাঙবে না।
হাদীসে এসেছে–
مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ الْقَضَاءُ.
অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তির বমি হলে তাকে সে রোযার কাযা করতে হবে না। (অর্থাৎ রোযা ভাঙবে না)। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০
তেমনি বমি মুখে এসে নিজে নিজেই ভেতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙবে না। –রদ্দুল মুহতার ২/৪১৪
মাসআলা : রতিক্রিয়া ছাড়া শুধু কল্পনার কারণে বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙে না। তবে রোযা অবস্থায় কু-চিন্তা অবশ্যই গর্হিত কাজ। –ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪
মাসআলা : কামভাবে কোনো মহিলার দিকে দৃষ্টিপাতের কারণে রতিক্রিয়া ছাড়াই বীর্যপাত হলে রোযা ভাঙবে না। তবে রোযা অবস্থায় স্ত্রীর দিকেও এমন দৃষ্টিতে তাকানো অনুচিত।
হাদীসে আছে, জাবের ইবনে যায়েদ রা.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর দিকে কামভাবের সাথে তাকিয়েছে, ফলে তার বীর্যপাত ঘটেছে, তার রোযা কি ভেঙে গেছে?
তিনি উত্তরে বললেন, না। সে যথারীতি রোযা পূর্ণ করবে। –মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬২৫৯; সহীহ বুখারী ১/২৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪
বলাবাহুল্য যে, কুদৃষ্টি গোনাহের কাজ। আর রোযা অবস্থায় তা আরো ভয়াবহ গোনাহ। এটি ব্যক্তিকে রোযার ফযীলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত করে দেয়।
মাসআলা : দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ছোলার দানার চেয়েও কম পরিমাণের খাবার গিলে ফেললে রোযা ভাঙবে না, তবে মাকরূহ হবে। তবে ছোলার চেয়ে পরিমাণে কম খাবারও মুখ থেকে বের করে পুনরায় গিলে ফেললে রোযা ভেঙে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে। –মাবসূত, সারাখসী ৩/৯৩-৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২
মাসআলা : ধোঁয়া অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর চলে গেলে রোযা ভাঙবে না। –ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩
মাসআলা : মশা-মাছি অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর চলে গেলে রোযা ভাঙবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, কারো গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোযা ভাঙবে না। –সহীহ বুখারী ১/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩
মাসআলা : মাথায় বা শরীরে তেল ব্যবহার করলে রোযার ক্ষতি হয় না। –মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/৩১৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
মাসআলা : চোখের পানি দুই-এক ফোঁটা মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। –আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩
মাসআলা : সাহরির সময় পান খেলে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। যাতে পান-সুপারির কোনো অংশ মুখে না থাকে। এর পরও থুথুতে লালচে ভাব থাকলে, এর কারণে রোযা ভাঙবে না। –ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২০৩
মাসআলা : সুস্থ অবস্থায় রোযার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান, অচেতন বা পাগল হয়ে যায়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না। –আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬৮; আলমাবসূত ৩/৮৮
মাসআলা : লিপস্টিক বা লিপজেল লাগালে রোযা নষ্ট হয় না। তবে রোযা অবস্থায় এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ মুখে চলে গেলে রোযা মাকরূহ হয়ে যাবে। আর গলার ভেতর চলে গেলে রোযা ভেঙে যাবে। –আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯
মাসআলা : কানে পানি প্রবেশ করলে বা কোনো কারণে পানি প্রবেশ করালে এর দ্বার offscreen রোযা ভাঙবে না। –ফিক্হুন নাওয়াযিল 2/297; যাবিতুল মুফাত্তিরাত, পৃ. 5৸
রোযা অবস্থায় যা করা মাকরূহ এবং যা মাকরূহ নয়
মাসআলা : রোযা অবস্থায় ওযু ছাড়া অন্য সময়ও কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া যায়। এতে অসুবিধা নেই। –রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯
তবে কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো মাকরূহ।
লাকীত ইবনে সাবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
بَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ، إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا.
(ওযু-গোসলের) সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও, তবে রোযাদার হলে নয়। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬৬; সুনানে আবু দাউদ ১/৩২২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৮৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯
মাসআলা : রোযা অবস্থায়ও শরীর শীতল করার জন্য গোসল করা যাবে। এতে বাধা নেই। –বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/৴১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯
মাসআলা : রোযা অবস্থায় প্রয়োজনে জিহ্বা দ্বারা কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া কিংবা বাচ্চাদের জন্য খাদ্য চিবানো মাকরূহ নয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন স্বাদ গলার ভেতরে চলে না যায়।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. রোযাদার মহিলা বাচ্চার জন্য খাদ্য চিবানোকে দোষের বিষয় মনে করতেন না। –মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৴১৬
তবে প্রয়োজন ছাড়া খাবার-জাতীয় কোনো কিছু চিবানো বা স্বাদ নেওয়া মাকরূহ।
মাসআলা : রোযাদারের জন্য এমন কাজ করা মাকরূহ, যা দ্বারা রোযাদার নিতান্ত দুর্বল হয়ে যায় এবং রোযা ভেঙে ফেলার আশঙ্কা দেখা দেয়। –আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬
মাসআলা : বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েয। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া যাবে না। আর তরুণদের যেহেতু এ আশঙ্কা থাকে, তাই তাদের বেঁচে থাকা উচিত।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে ছিলাম। ইতিমধ্যে একজন যুবক এল এবং প্রশ্ন করল, আল্লাহর রাসূল! আমি কি রোযা অবস্থায় চুম্বন করতে পারি?
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না।
এরপর এক বৃদ্ধ এল এবং একই প্রশ্ন করল।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ।
আমরা তখন অবাক হয়ে একেঅপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জানি, তোমরা কেন একেঅপরের দিকে তাকাচ্ছ। শোন, বৃদ্ধ ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। –মুসনাদে আহমাদ ২/১৮০, ২৫০
আবু মিজলায রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর নিকট এক বৃদ্ধ রোযা অবস্থায় চুমু খাওয়ার মাসআলা জিজ্ঞাসা করল; তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর এক যুবক এসে একই মাসআলা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। –মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৮৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০
মাসআলা : রোযা অবস্থায় কাপড় পরা থাকলে এবং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর আলিঙ্গন করা মাকরূহ নয়। তবুও রোযা অবস্থায় এসব থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। আর বিবস্ত্র অবস্থায় এমনটি করা মাকরূহ। –আলবাহরুর রায়েক ২/২৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০
মাসআলা : ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে তা গিলে ফেলা মাকরূহ। তবে জমা না করে এমনি থুথু বা লালা গিলে ফেলা মাকরূহ নয়। –ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯
মাসআলা : রাতে গোসল ফরয হয়েছে, কিন্তু গোসল করা হয়নি। এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেছে, এতে রোযার ক্ষতি হবে না। অবশ্য রোযা অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ অপবিত্র থাকা উচিত নয়। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০